নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকেই জমে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহীর ছয়টি আসনের নির্বাচন। নানা সমীকরণ বিবেচনা করে অধিকাংশ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নেতাকর্মীরা বলছেন, দু-একটি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে যাচ্ছে এবারের নির্বাচন।

জেলার গোদাগাড়ী-তানোর নিয়ে রাজশাহী-১ সংসদীয় আসন। এই আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস মিলছে। আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী আবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। আসনটিতে ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং শিক্ষক পেটানোসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সেই জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা অন্য প্রার্থীর দিকে ঘুরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে গোলাম রাব্বানী দীর্ঘসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একসময় তিনি তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ কারণে গোদাগাড়ী-তানোরে তার প্রচুর কর্মী-সমর্থক ও অনুসারী রয়েছে। এই নির্বাচনে নেতাকর্মীদের কাজে লাগাতে চান তিনি। এ ছাড়া এই আসনের আরেক প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। মনোনয়ন উত্তোলন থেকে শুরু করে জমা, যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল, পরে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। সবমিলিয়ে আসনটিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন মাহি। সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা পা ধুইয়ে বরণ করে নেওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন। তার বিরুদ্ধে তেমন শক্ত প্রার্থী না থাকলেও এবার ধারণা করা হচ্ছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা ফ্যাক্টর হতে পারেন। এই প্রার্থী শিক্ষক নেতা। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিল হলেও সর্বশেষ হাইকোর্টে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন শফিকুর রহমান বাদশা। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংসদ সদস্য বাদশার অনেকটা দূরত্ব রয়েছে বলে জানা গেছে। আর এই সুযোগটাই কাজাতে লাগাতে চান আওয়ামী লীগের বাদশা।

এদিকে, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এর ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন তুলেছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এই আসনটিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন আয়েন উদ্দিন। আয়েন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আসাদের বিরুদ্ধে তেমন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হক। নেতাকর্মীরা বলছেন, ১৫ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালীন বাগমারার উন্নয়ন করেছেন। সর্বহারা-জেএমবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিপর্যস্ত বাগমারাকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছেন। তবে নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা কারণে নেতাকর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন সংসদ সদস্য এনামুল হক।

অপরদিকে, বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল ও আবুল কালাম আজাদের অসংখ্য সমর্থক রয়েছে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাগমার মোহনগঞ্জে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে কর্মী সমর্থকদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে দুপুরে মাড়িয়া ইউনিয়নে কালামের সমর্থক মাহাবুর রহমানকে (৪২) হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে আসনটিতে সংসদ সদস্য এনামুল ও কালামের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জোর সম্ভবনা রয়েছে।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। এই আসনে মনোনয়ন তুলেও প্রত্যাহার করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান। যার ফলে এই আসনে তেমন শক্ত কোনো প্রার্থী নেই। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই  আবদুল ওয়াদুদ দারা জয়ী হতে যাচ্ছেন এমনটাই ধারণা।

এদিকে, বাঘা-চারঘাট উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৬ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও তিনি বিজয়ী হন। ১৫ বছরে বাঘা ও চারঘাটের বিভিন্ন সেক্টরে অনেক উন্নয়ন করায় তার সমর্থন বেড়েছে।

তবে এবার তার (শাহরিয়ার আলম) বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচন করছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহেনুল হক রায়হান। রায়হান এ আসনে ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি চারঘাট পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এলাকায় ত্যাগী ও দুঃসময়ের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত। যার ফলে এই আসনে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখার অপেক্ষায় বাঘা-চারঘাটবাসী।