বাংলাদেশে গত ২৬শে মার্চ থেকে অঘোষিত লকডাউন চলছে, যা আগামী ২৫শে এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
আকাশ, নৌ, সড়ক ও রেলসহ সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি জিনিসপত্রের প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সকল প্রকার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কলকারখানাও বন্ধ রয়েছে।
শুরুতে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন করা হলেও পরবর্তীতে তা কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। এই অঘোষিত লকডাউন ২৫শে এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা আরও বাড়ানোর সম্ভাবনাও রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১৮৫টি দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ৮২টি দেশ পুরোপুরি বা আংশিকভাবে লকডাউন প্রয়োগ করেছে।
কিন্তু এই লকডাউনে পুরো অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ার কারণে বিশ্বের অনেক দেশ লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবতে শুরু করেছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সতর্কবাণী দিয়েছে যে, অর্থনীতি এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বের অন্তত তিন কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পূর্বাভাস দিয়েছে যে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় বিশ্বের প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ হারিয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লকডাউন তুলে নিতে চাইছেন। স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কিছু দেশ বেশ কিছু কড়াকড়ি এর মধ্যেই শিথিল করেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন যে, “সামনে রোজা, আমরা সবকিছু একবারে বন্ধ করে রাখতে পারবো না। আমাদের কিছু কিছু জায়গা আস্তে আস্তে উন্মুক্ত করতেই হবে।”
তবে লকডাউন প্রত্যাহার বা শিথিল করার আগে ছয়টি শর্ত পূরণের তাগিদ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এসব শর্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে?
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনই দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং নতুন নতুন এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে নতুন করে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৩৪জন। ২৪ ঘণ্টায় ২,৯৭৪ জনকে পরীক্ষা করে এই রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩৮২ জন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১১০ জনের।
আট কোটি জনসংখ্যার দেশ জার্মানিতে যেখানে প্রতিদিন পাঁচ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হয়, ১৬ কোটির বেশি মানুষের দেশ বাংলাদেশে সেখানে প্রতিদিন পরীক্ষা করা হচ্ছে প্রায় তিন হাজার মানুষকে।
ঢাকায় যেমন রোগী শনাক্ত বাড়ছে, তেমনি ঢাকার বাইরের জেলাশহরগুলোতেও রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন করে অনেক জেলাতেও রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বে-নজীর আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “গত কয়েকদিনের চিত্রে দেখা যায়, রোগের বিস্তার তো থামছেই না, বরং বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে রোগটি নিয়ন্ত্রণে থাকার কোন লক্ষণও নেই।”
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলছেন, “এরকম মহামারিতে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, সংক্রমণের বিস্তারটা বন্ধ করে দেয়া। যেমন, নারায়ণগঞ্জের মতো যেসব জেলায় সংক্রমণ হচ্ছে, সেটা পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়া।”
“কিন্তু বাংলাদেশের মতো ঘনবসতির দেশে সেটা তো পুরোপুরি করা সম্ভব হয় ন। গত দুইতিনদিনে আমরা তো লক্ষণ ভালো দেখছি না। আমরা দেখছি, অনেক মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। আবার যে বেরিয়েছে, সে রোগের ব্যাপারে জানে। এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে একধরণের উদাসীনতা কাজ করে।”
“এখন যে ট্রেন্ড চলছে, তাতে এই সময়ে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে, কমবে না।”