নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিলনা। তারা সিদ্ধান্ত নেন একসাথে আর সংসার করবেননা। কিন্তু সংসার জীবনের ইতি টানবেন কিভাবে এ নিয়ে সমস্যা প্রকট হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। করোনাকালীন সময়ে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ইতি টানার বিষয়টিও ঝুলে থাকে দীর্ঘ কয়েক মাস। সরকারের তরফ থেকে করোনাকালীন বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পূণরায় চালু হয়। সোমবার স্বামী-স্ত্রী হাজির হন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম হুমায়ুন কবীরের আদালতে। কিন্তু ওই দম্পতির এক কন্যা শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
এক পর্যায়ে আদালতের বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম হুমায়ুন কবীর কন্যা শিশুটির ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে কন্যা শিশুর নামে ব্যাংকে ৩ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করার আদেশ দেন। সেই সাথে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুর নামে করা ফিক্সড ডিপোজিট কেউ যেন ভাঙ্গাতে না পারেন সে জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেন আদালত। আদালতের এমন মানবিক যুগান্তকারী আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন উভয় পক্ষের আইনজীবী সহ আদালত পাড়ায় উপস্থিত থাকা সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। বিজ্ঞ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীরের এমন আদেশে দিনভর আলোচনা চলে আদালত পাড়ায়।
আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শেষে ওই শিশুকে কোলে নিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীর। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আজ আমার আদালতে একটি মামলা নিষ্পত্তি করলাম। কিন্তু এই মাসুম বাচ্চাকে বাবা-মায়ের সাথে রাখতে পারলাম না। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। শেষ পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স হলো। বাচ্চাটি তার মায়ের কাছে থাকলো। তবে বাচ্চার বেটার্মেন্টের জন্য তিন লক্ষ টাকার একটি FDR এর ব্যবস্থা করলাম। যে টাকা বাচ্চার বাবা প্রদান করলেন।FDR এর নিরাপত্তার জন্য ব্যাংক বরাবর একটি প্রত্যায়নপত্র ইস্যু করলাম। বাচ্চাটি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত ঐ FDR কেউ ভাঙ্গাতে পারবেনা।’
স্ট্যাটাসের শেষে তিনি লিখেছেন, ‘স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ডিভোর্স হলেও বাবা-মায়ের কোন ডিভোর্স হয় না।’
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পরপরই মুহূর্তেই এ ঘটনাটি টক অব দ্যা চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিণত হয়। ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বক্সে অনেকেই মানবিক ও যুগান্তকারী আদেশ হিসেবে প্রশংসা করেন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবীরের।
কমেন্ট বক্সে একজন লিখেছেন আদালত পাড়ার মানবিক ফাটাকেষ্ট। অপর একজন লিখেছেন এ ধরনের মানবিক ও যুগান্তকারী আদেশে আদালতের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আরও গাঢ় হবে সাধারণ মানুষের।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম এম হুমায়ুন কবীর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবাও একজন প্রবীণ আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক।