শরীয়তপুর সংবাদদাতা,স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র কয়েকঘণ্টা বাকি। সেতুর আদলে ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে করা হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দুই প্রান্তে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর আদলেই তৈরি করা হয়েছে জনসভা মঞ্চ। মঞ্চের ঠিক সামনে পানিতে ভাসতে থাকবে বিশাল আকৃতির একটি নৌকা। তার পাশে ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই মঞ্চ। দেখে মনে হবে সেতুর পাশ দিয়ে বড় একটি নৌকা চলছে। ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের পর ব্যতিক্রমী এ মঞ্চে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী।
জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায় জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে বসানো হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। থাকবে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। সভাস্থলে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার, ভিআইপিদের জন্য আরও ২২টি শৌচাগার, সুপেয় পানির লাইন, ৩টি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, নারীদের আলাদা বসার ব্যবস্থা, প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সভাস্থলে দূরের দর্শনার্থীদের জন্য ২৬টি এলইডি মনিটর সেই সাথে স্থাপন করা হয়েছে ৫০০ মাইক। এ ছাড়া নদীপথে আসা মানুষের জন্য ২০টি পন্টুন তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। জনসভা ঘিরে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে এসএসএফ, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশাল এ আয়োজন ঘিরে পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ।
জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজ করছে ক্যানভাস বাংলাদেশ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নকর্মী কবির হোসেন বলেন, মঞ্চ তৈরির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। ব্যতিক্রমী ওই মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। মঞ্চের সামনে পানি থাকবে। তার ওপর বড়-ছোট বেশ কয়েকটি নৌকা ভাসতে থাকবে। মঞ্চটি পুরো পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হয়েছে। বিকেলের মধ্যেই সাজসজ্জার কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জনসভাস্থলের দুই বর্গকিলোমিটার জায়গা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পেয়েছে পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মোজ্জামেল হক জানান, সভাস্থলে ওয়াচ টাওয়ার, এলইডি মনিটরসহ নিরাপত্তা বিষয়ক সব ধরনের কাজ তারা শেষ করেছেন। স্মরণকালের সেরা আয়োজন হবে এখানে। জনসভায় আসা অতিথিদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সভাস্থলে নারীদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিআইপি অতিথি, বিদেশি অতিথি ও কূটনীতিকদের জন্য আলাদা জোন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ফায়ার সার্ভিস ফরিদপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, জনসভাস্থল ও নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের ১০০ থেকে ১২০ জন ফায়ারম্যান কাজ করবেন। এ ছাড়া বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) তাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই তারা কাজ করবেন।
পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক এলাকা নাওডুবা গোলচত্বর জমাদ্দার স্ট্যান্ডের তেল ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, একটি পদ্মা সেতুর অভাবে এতদিন আমরা খুব কষ্ট করে ঢাকায় যাতায়াত করতাম। আর মাত্র কয়েকঘন্টা পর আমাদের সেই কষ্টের দিন শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। শুধু যাতায়াত এই নয় আমরা খুব সহজে আমাদের তেল আনা নেয়া করতে পারব এবং ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক প্রসার ঘটবে। উন্নত হবে আমাদের জেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই স্বপ্ন আর আশা পূরণ করেছেন তাই তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা এখন খুবই খুশি।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে প্রত্যাশা রয়েছে। ওখানে পানি থেকে শুরু করে তাদের সব ধরনের সুবিধা দিতে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ ছাড়া ২০ শয্যার একটি ও ১০ শয্যার আরও দুটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।