নিউজ ডেস্ক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) প্রধানের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে সংস্থাটিতে মার্কিন তহবিল চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিঠিতে সংস্থাটিকে ‘বাস্তব উন্নতি’ সাধন করার জন্য ৩০ দিনের আলটিমেটাম বা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প, না হলে লাখ লাখ ডলারের তহবিল ও যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ, উভয়ই হারানোর ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি
ডবিস্নউএইচওর প্রধান টেড্রোস অ্যাধানমকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে ডিসেম্বর থেকে সংস্থাটি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। সোমবার রাতে টুইটারে চিঠিটি প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার ডবিস্নউএইচওর বিশ্ব স্বাস্থ্য অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স এজার কোভিড-১৯ রোগটিকে ‘বহু প্রাণের মূল্যে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেওয়ার’ অভিযোগে সংস্থাটিকে অভিযুক্ত করেন। পরে নিজের চিঠিতে ট্রাম্প ডবিস্নউএইচওকে অভিযুক্ত করে সংস্থাটি ‘উদ্বেগজনকভাবে’ চীনের অধীন বলে মন্তব্য করেন।
একইদিন ট্রাম্প জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থাটিকে ‘চীনের পুতুল’ বলেও উলেস্নখ করেন। করোনাভাইরাস চীনের উহানে ডিসেম্বরের শুরুতে বা তারও আগে ছড়ানো শুরু করেছিল, এমন ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন’ থাকার দাবি করে ডবিস্নউএইচও সেসব প্রতিবেদন ‘ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষা’ করেছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চাপে পড়ে ডবিস্নউএইচও জরুরি অবস্থা ঘোষণা দিতে দেরি করেছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেন তিনি। এরপর ট্রাম্প সংস্থাটিকে ৩০ দিনের মধ্যে ‘বড় ধরনের বাস্তব উন্নতির’ প্রতিশ্রম্নতি দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে এতে তিনি কী বুঝিয়েছেন তা পরিষ্কার করেননি।
এই পরিবর্তন করা না হলে যুক্তরাষ্ট্র তার তহবিল স্থগিত করার অস্থায়ী পদক্ষেপকে স্থায়ী পদক্ষেপে পরিণত করতে পারে এবং ‘সংস্থাটিতে নিজেদের সদস্যপদ পুনর্বিবেচনা করতে পারে’ বলে ট্রাম্প হুমকি দেন।
গত মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মার্কিন তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। দেশটি এককভাবে ডবিস্নউএইচওর সবচেয়ে বেশি তহবিলের যোগানদাতা। গত অর্থবছরে সংস্থাটির প্রায় ১৫ শতাংশ তহবিল যোগান দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ডবিস্নউএইচওর বার্ষিক অধিবেশনে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো স্বাস্থ্য সংস্থাটির কাজের মূল্যায়ন করছে। দুই দিনের এই অধিবেশন মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ফের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন ট্রাম্প। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা নিয়ে প্রবলভাবে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।
এই পরিস্থিতিতে প্রাদুর্ভাবের তথ্য আড়াল করার জন্য চীনকে দায়ী করেছেন তিনি এবং বেইজিংকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারার জন্য ডবিস্নউএইচকে অভিযুক্ত করেন। তবে চীন নিয়মিতভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা ‘খোলামেলাভাবে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সময়মতো’ তথ্য প্রকাশ করেছে বলে দাবি করেছে।
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বড়
ঘোষণা আসছে : ট্রাম্প
এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসাবিদ্যা ও ভ্যাকসিন নিয়ে শিগগিরই বড় ঘোষণা আসছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার হোয়াইট হাউসে রেস্তোরাঁ প্রতিনিধি ও ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা জানান তিনি।
বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘চিকিৎসাবিদ্যা ও ভ্যাকসিনের বিষয়ে এটা অনেক বড় একটা দিন। বিশাল উন্নতি হয়েছে। এ নিয়ে অনেক বড় ঘোষণা আসছে। আর মাত্রই জানা গেল, শেয়ারবাজারে প্রায় এক হাজার পয়েন্ট বেড়ে গেছে।’
সম্প্রতি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশ্বব্যাপী ১১৫টি ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য কোয়ালিশন ফর প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস’ (সিইপিআই)। এরই মধ্যে মানবদেহে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। তবে ‘ইউরোপিয়ান মেডিক্যাল এজেন্সি’ (ইএমএ) বলেছে, সবচেয়ে দ্রম্নত হলেও এই টিকা অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত হতে কমপক্ষে একবছর সময় লাগতে পারে।
নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিচ্ছি : ট্রাম্প
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে পরিচিত এই ওষুধটি করোনা চিকিৎসায় ব্যবহারের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন ট্রাম্প। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহপোষণ করে এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। সোমবার আকস্মিকভাবে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, গত দেড় সপ্তাহ ধরে তিনি প্রতিদিন একটি করে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণ করছেন।
উলেস্নখ্য, তিনি চিকিৎসকদের তোয়াক্কা করেন না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ধার ধারেন না। এমনকি, দেশের এফডিএর সতর্কবার্তাকেও আমলে নেন না। সেটাই করেন, যা তার মনে হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ওষুধ খেয়ে সেটি আরও একবার প্রমাণ করলেন।