বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃরাজশাহীর বাঘায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। সোমবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় সাবরেজিষ্ট্র অফিসের সামনে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রেক্ষিতে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কাজকর্ম ও দোকানপাট কিছু সময় বন্ধ ছিল।
জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। একেক সময় একেকজন সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। তাদের স্বাক্ষরিত স্লিপ না নিলে, সে জমি রেজিস্ট্রি হয় না। সমিতির নামে যে টাকা আদায় করা হয় সেটাও বুঝে পাননা দলিল লেখকরা। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলে দলিল লেখক সমিতির সাথে থাকতে চাননা,সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপন। এ নিয়ে জহুরুল ইসলাম স্বপনের সাথে বর্তমান সভাপতি শাহিনুর রহামান পিন্টুর সমর্থকদের কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় শামিম হোসেন, মাজিদুল ইসলাম, সজল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, এনামুল হক, মুস্তোফা হোসেন, জয় হোসেন,পারভেজ হোসেন, শাহিন আলম, রাব্বি হোসেন, সনেট আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, নাদিম হোসেন, সাজিত আহমেদ, আনজারুল ইসলাম আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উম্মে হাবীবা বৃষ্টি জানান,তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ভাই ভাই স্টোরের মালিক মাজিদুল ইসলাম বলেন, আধাঘন্টা ব্যাপি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। ছোঁড়া ইটের আঘাতে তিনিও আহত হয়েছেন। ইটের আঘাতে রওশনারা হোটেলের সামনের গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। সরেরহাট গ্রামের উজ্জল হোসেন বলেন, ক্রয় করা জমি রেজিস্ট্রি করতে না পেরে ফিরে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,সিন্ডিকেটের কারণে বছরের পর বছর ধরে গলাকাটা ফি দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি করেন ক্রেতারা। তাদের ক্ষতির কথা জেনেও প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি কেউ।
জহুরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। এতে জমি ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও লাভবান হন,যারা সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। দলিল লেখকরাও তাদের হিসাব বুঝে নিতে পারেননা।
তিনি জানান,আনোয়ার হোসেন মিল্টনকে বাদ দিয়ে বর্তমানে শাহিনুর রহমান পিন্টু সভাপতি হয়েছেন। এর আগে সভাপতি ছিলেন-আব্দুল লতিফ আর শাহিনুর রহমান পিন্টু ছিলেন সাধারন সম্পাদক। দলিল লেখকদের মতামতের ভিত্তিতে সমিতি গঠন করা হয়না। তাই অনেক দলিল লেখক নামমাত্র সমিতির আওতায় থাকতে নারাজ। কিন্তু সমিতির মাধ্যমেই কাজ কর্ম চালাতে চান সম্প্রতি সময়ের সভাপতি। এসব নিয়ে ধাওয়ার পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শাহিনুর রহামান পিন্টু বলেন আগে সাধারন সম্পাদক ছিলাম। কয়েকদিন আগে সভাপতির হয়েছি। কিন্তু সমিতির বাইরে চলতে চান সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সাব রেজিস্ট্রার এএন নকিবুল আলম বলেন, সাবরেজিস্ট্রি অফিস ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় । ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু সময় জমি রেজিস্ট্রি কাজ বন্ধ ছিল। সমিতির বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়টি দলিল লেখকরাই ভালো জানেন। সমিতির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে দলিল সম্পাদনের কথাও অস্বিকার করেন তিনি।
বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হয়। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, সাবরেজিস্ট্রি অফিসার আমার অফিসে এসে বিষয়টি অবগত করেছেন।