শোনা যায় চুল্লিতে ঢোকাবার আগে সিরিটি শ্মশানঘাটে তাঁর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল “ইনিই কি সেই শম্ভু মিত্র? নাটক করেন?”
মেয়ে জবাব দেন নি। তাঁর মাথায় কাজ করছিল বাবার শেষ ইচ্ছাপত্র ” “আমি সামান্য মানুষ, জীবনে অনেক জিনিষ এড়িয়ে চলেছি। তাই মরবার পরেও আমার দেহটা যেন তেমনি নীরবে, একটু ভদ্রতার সঙ্গে, সামান্য বেশে, বেশ একটু নির্লিপ্তির সঙ্গে পুড়ে যেতে পারে।”
এ তো গেল শেষের কথা। মাঝে কত গল্প বয়ে গেল মিনার্ভা, রংমহল, নাট্যনিকেতন দিয়ে। এল শ্রীরঙ্গম। এলেন শিশির ভাদুড়ি। শম্ভু মিত্রের জীবনে। অভিনয়, আড্ডা, টি এস এলিয়ট। আর শেক্সপীয়র মুখস্থ বলা। তারপরের গল্প সবাই জানে। বিজন ভটচাযের সঙ্গে নাটক করতে গিয়ে তৃপ্তি ভাদুড়ির সঙ্গে পরিচয়, প্রণয়। বহুরূপী। নবান্ন আর ছেঁড়া তার। তারপরেই এল সেই সব বদলে দেওয়া চার অধ্যায়। নকশালপন্থী নাট্যকার, অভিনেতা অমল রায় বলেছিলেন, “প্রত্যেকবার দেখার সময়ে আমি মনে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ নিয়ে হলে ঢুকতাম, কিন্তু বেরিয়ে আসতাম বুকের মধ্যে কাউকে না বলতে পারা এক আশ্চর্য যন্ত্রণা নিয়ে।”
বলা হয় “প্রসন্ন, করন্থ, তনবির, পানিক্কর প্রমুখ সর্বভারতীয় নাটমঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানোর আগেই লোকায়ত নাট্যনির্মাণের নীল নকশা ছকেছিলেন শম্ভু মিত্র। আরব্ধ সে কাজ অসম্পূর্ণ থেকেছে। কিছুটা অনিবার্য ভাবেই একা থেকে আরও একা হতে হতে সংগঠনভিত্তিক নাট্যের অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছেন তিনি। কিন্তু, সিকি শতকের এই অভিযাত্রাই বলে দিচ্ছে, কেন তাঁকে আধুনিক ভারতনাট্যের প্রথম পুরুষ বলতে আমাদের কোনও সংশয় থাকার কথা নয়।”
নতুনভাবে শম্ভু মিত্র দেখলেন রবি ঠাকুরকে। রক্ত করবী, মুক্তধারা প্রথম ডিকন্সট্রাকশনের পথ দেখালো, মূলকে বিকৃত না করেই। এল ধরতি কে লাল আর কাল্ট হয়ে যাওয়া জাগতে রহো। এর মধ্যেই মধুবংশীর গলি। আর সব শেষে সোয়ান সং-এর মত চাঁদ বনিকের পালা। চাঁদের মধ্যে দিয়ে নিজের আত্মকথা।
তিনি ডাক দেন, “প্রস্তুত সবাই? হৈ-ঈ-ঈ-য়াঃ। কতো বাঁও জল দেখ। তল নাই? পাড়ি দেও, এ আন্ধারে চম্পক নগরী তবু পাড়ি দেয় শিবের সন্ধানে। পাড়ি দেও, পাড়ি দেও”