দুর্গাপুর প্রতিনিধি:কোটা আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদে হামলা-লুটপাটের ঘটনা বন্ধ সহ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দুর্গাপুর উপজেলা শাখার নেতারা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ও রাজশাহী জেলা (পূর্ব) জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. নুরুজ্জামান লিটনের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা (পূর্ব) জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মু. নুরুজ্জামান লিটন।
এ সময় তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে খুবই খাটো করে দেখা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চক্রান্ত উল্লেখ করে শাসকগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে জামায়াত-শিবিরের মোড়ক দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে চেয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের সাথে সাধারণ মানুষ সহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগদেন। শাসকগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মনোভাব বুঝতে না পেরে রাজনৈতিকভাবে দমনের চেষ্টা চালান। তারই অংশ হিসেবে আবু সাঈদ, মুগ্ধকে নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ছাত্রদের আন্দোলন কখনও বৃথা যায়নি।
নুরুজ্জামান লিটন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র জনতার উত্থানকে মূল্যায়ন করে এই আন্দোলন এবং বিজয়কে ইতিবাচক ভাবে দেখা হচ্ছে। তবে স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর সারাদেশের সরকারি স্থাপনায় যেভাবে হামলা-লুটপাট চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে নৃশংসতা দেখিয়েছে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এমন বাংলাদেশ আমরা চাইনি। যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দিয়ে ভুল স্বীকার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে বাসায় হামলা, ডাকাতি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমার বাসায় ডাকাতি করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছি, ব্যবসায়ীক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য।
নুরুজ্জামান লিটন আরও বলেন, জনগণ চাইলে জামায়াতে ইসলামী ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যাবে। তবে জোর করে ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনমত গড়ে তুলে জনগণের সমর্থন ও সম্মতি বড় প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সৎ লোকের শাসন ও আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, সংসদ ভেঙ্গে গেলেও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যারা দায়িত্বে আছেন তারা পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন এটা আমরা চাই। তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, তারা এটার হকদার। এক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা থাকবে।
উপজেলা জামায়াতের আমীর মাস্টার সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক ফজলুল বারী সোহরাব, জামায়াত নেতা অধ্যাপক ড. সেলিম রেজা, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শামীম উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি হাজী আমজাদ হোসেন, পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি শাহীনুর ইসলাম, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইসাহক আলী, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন, আলীপুর সাংগঠনিক থানা শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান ইমন ও সাবেক সভাপতি মুরাদ ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে মু. নুরুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে জামায়াত নেতারা দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তারা।