মাসুদ রানা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
পাটের সুদিন ফিরে পেয়েছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চর অঞ্চলের কৃষকেরা। অতীতে পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। পরবর্তীতে এর মূল্য না পেয়ে কৃষকরা এই সোনালী আঁশের আবাদ প্রায়
বিলুপ্তির পথ হয়ে দাড়িয়ে ছিল। বর্তমানে ভাল দাম পেয়ে আবারও পাটের সুদিন ফিরে এসেছে। পাটের সুদিনে জেলার কৃষকরাও পাট চাষে নেমেছে। আর এই পাট বিক্রির জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হাট। তার অংশ হিসাবে সিরাজগঞ্জের যমুনাবেষ্টিত কাজিপুরে যমুনার চরে নাটুয়ার ও সদর উপজেলা রতনকান্দি কান্দি হাটের পাশে জমে উঠেছে ভাসমান পাটের হাট। আর এই হাটে কাজিপুর ও সদর উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলা থেকে কৃষক ও ব্যাপারীরা এসে পাট ক্রয় বিক্রয় করছেন।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ টি উপজেলায় এবছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬,৮৪০ হেক্টর জমিতে। চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১২,৩৬৪ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে তোষা পাট ১১,৭৭০ হেক্টর মেস্তা পাট, ৫৩৫ হেক্টর দেশি পাট, ১০৫০ হেক্টর কেনাপ পাট, ৩,৩৮৫ হেক্টর। জমি থেকে পাট কাটা ও ধোয়ার পর শুরু হয়েছে পাট বাজারজাতকরণ।
কাজিপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নাটুয়াপাড়া হাট ও সদর উপজেলার রতন কান্দি হাটের পাশে যমুনা নদীর পাড়ে নৌকার উপরে জমে উঠেছে সোনালী আঁশ পাট বেচা-কেনা ।কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলা তিনটি ইউনিয়নের জমিতে উৎপাদিত পাট বিক্রয় করতে এবং আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে নিয়ে আসে এ হাট গুলোতে পাট চাষিগণ। বর্তমানে বাজারে পাটের ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। যমুনা নদীর পাড়ে উপজেলার চরাঞ্চলে একমাত্র নাটুয়াপাড়া হাটটি সপ্তাহে দুদিন শনিবার ও বুধবার ভোরে পাটের হাট বসে এবং প্রতি বুধবারে সদর উপজেলা রতনকান্দি হাট বসে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত । যমুনা চরে পাটের উৎপাদন ও মান ভালো হওয়ায় ব্যাপারী ও ক্রেতাদের হাঁক ডাকে জমে উঠেছে বেচাকেনা। প্রতি মন পাট ২৫শ থেকে ২৬শ টাকায় বেচা কেনা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, নৌকা করে জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, টাংগাইলের ভুয়াপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয় করতে ব্যাপারীরা আসে এ হাট গুলোতে। এবারে মন প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০টাকা থেকে ২৬০০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা এবং হাটের ক্রেতা- বিক্রেতা ।সরিষাবাড়ি উপজেলার পাটের ব্যাপারী আবু তাহের বলেন , পাট কিনে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় তোলা সহজ হয়। যোগাযোগের সুবিধা হয় এমন কি পরিবহন ও খরচ কম। প্রতিহাটে তিনি ৪০-৬০ মন পাট নৌকা থেকে ক্রয় করে থাকেন। চরগিরিশের আব্দুস সোলেমান ব্যাপারি জানান , হাট থেকে পাট কিনে নৌকায় তোলা অসুবিধা হয়। তাই নৌকা থেকে পাট কিনি। তিনি প্রতিহাটে ৭০-৭৫মন পাট ক্রয় করেন।
নিচিন্ত পুরের কৃষক শাহিন আলম বলেন, আমি ৩বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম বন্যায় ডুবে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে তার পর ও বিক্রি করে বেশ ভালো দাম পেয়েছি।
এলাকাবাসি জানান, পাট কিনতে টাংগাইলের ভুয়াপুর, কুড়িগ্রামের ভুরুংগামারি ও জামালপুরের মাদারগঞ্জ থেকে অনেক পাইকার পাট কিনতে আসে। প্রতি হাটে ১ থেকে ২ হাজার মন পাট ক্রয়- বিক্রয় হয়।
নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, এ হাটে কাজিপুরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাট ক্রয়-বিক্রয় করতে পাইকাররা আসে। প্রতি হাটে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মন পাট ক্রয়- বিক্রয় করে। এবারের পাটের দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম জানান, এ বছর বন্যার কারণে পাটের আশানুরূপ ফলন হয়নি। হাটে ২৫শ থেকে ২৬শ টাকা মন দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এবছর বিঘা প্রতি গড়ে ৭/৮ মন পাটের ফলন হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন ।
তিনি আরও বলেন, বগুড়া জামালপুর টাংগাইল সহ বিভিন্ন জেলার লোকজন এ হাট গুলোতে পাট বেচা -কেনা করতে আসেন।