নিউজ ডেস্ক: দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে কনডেম সেলে দিন কাটছে এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের। ১৫ বছর ধরে তিনি কারাগারে। এর মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের আরেক মামলায় তার আট বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
যে দুটি মামলায় বাবরের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে, সেগুলো হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা। দুটি মামলাই এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা ঝুলে আছে আট বছর ধরে। আর ২১ আগস্ট মামলাটি হাইকোর্টে এসেছে চার বছর আগে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ২১ আগস্ট মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করতে এরই মধ্যে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখন প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ ঠিক করে দিলেই ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু হবে।
মামলা দুটির চুড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে বাকি আরও দুটি ধাপ। সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল থাকলে তবেই ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেবে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনালে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সামনে আদালতের ছুটি আছে, আশা করছি তার পরই প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য একটি বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন। প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের যে বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন আমরা সেখানেই শুনানি করব।’
বাবরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘যখনই মামলাগুলো শুনানির কার্য তালিকায় আসবে তখনই আমরা শুনানি করতে পারব। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
১৫ বছর লোকচক্ষুর অগোচরে
লুৎফুজ্জামান বাবর দুদকের মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে শুনানিতে দেশের বিভিন্ন আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হওয়াই ছিল এক সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর একমাত্র প্রকাশ্য উপস্থিতি। তবে গত বছরের ১২ অক্টোবরের পর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। বাবরের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে জানান, ওইদিন দুদকের মামলার রায়ের সময় বাবরের সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়। বর্তমানে তাকে রাখা হয়েছে কেরানিগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।
সার্টিফিকেটের হিসেবে লুৎফুজ্জামান বাবরের বয়স এখন ৬৪। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাকে যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল ৪৩ বছর। এ নিয়োগ অনেককে বিস্মিত করেছিল, কেননা জাতীয় রাজনীতিতে তখনও তিনি নিতান্ত অপরিচিত মুখ। নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের বাইরে তার তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না। অনেকে মনে করেন,এরশাদ সরকারের সময় বিমানবন্দরকেন্দ্রিক একটি চোরাচালান ব্যবসা পরিচালনা করতেন বাবর।
মনে করা হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ক্ষমতার সমান্তরাল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ‘হাওয়া ভবনের’ সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই ছিল বাবরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ হয়ে ওঠার উৎস। নানারকম বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যও তিনি সে সময় আলোচিত হয়ে ওঠেন।
বাবর নিজে গ্রেনেড তুলে দেন
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় যাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবরও আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এ হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় একটি ভিডিও জবানবন্দি দেন। তাতে দেখা যায়, এ জঙ্গি নেতা হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে তারেক রহমান ও বাবরকে চিহ্নিত করেছেন। মুফতি হান্নানের ভাষ্যমতে, ওই হামলার আগে জঙ্গিদের সঙ্গে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্তত তিনটি বৈঠকের সবকটিতেই বাবর উপস্থিত ছিলেন।
তৃতীয় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় মিন্টো রোডে বাবরের সরকারি বাসভবনে। প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় অনুষ্ঠিত অপর একটি বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর নিজেই জঙ্গিদের হাতে গ্রেনেড তুলে দিয়েছিলেন বলে মুফতি হান্নান তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। এই গ্রেনেডগুলিই ২১ আগস্টের হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল।