৬১ জেলায় ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষাবাদ
এক ছাতার নিচে ছোট চাষিরা, পাচ্ছেন কম খরচে বেশি ধান।
নিউজ ডেস্ক: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার মিঠুন শেখের জমি মাত্র আট কাঠা। ছোট্ট এই জমিতে ধান আবাদ করতে গিয়ে যে খরচ হয়, তাতে আর লাভের মুখ দেখা যায় না। একই অবস্থা টুঙ্গিপাড়ার কুশলী ইউনিয়নের সেলিম বিশ্বাসেরও। তারও জমি আট কাঠা। অল্প জমিতে আবাদে খরচ বেশি হওয়ায় কোনো কোনো মৌসুমে জমি পতিত রাখেন। এই সমস্যা শুধু মিঠুন শেখ বা সেলিম বিশ্বাসের নয়, সারা দেশের সব ক্ষুদ্র কৃষকের একই অবস্থা।
এই সমস্যা সমাধানে সরকার সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। এতে ক্ষুদ্র কৃষকদের এক ছাতার নিচে আনা হয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানীরা বলেছেন, উত্তরাধিকার বিভাজনসহ নানা কারণে আমাদের দেশের জমিগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যান্ত্রিকীকরণের জন্য দরকার বড় জমি। তাছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণের আরেকটি বাধা হলো সব কৃষক একই সময়ে চাষাবাদ করেন না। নানা জাতের ও সময়ের বীজ নির্বাচন করায় সবার বীজতলাও এক সময়ে গজায় না। ফলে চারা রোপণের সময়ও হয় ভিন্ন, ধানও তাই এক সময়ে পাকে না। ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জমিতে আলাদা সময়ে কৃষি যন্ত্রগুলো ব্যবহারে অনেক খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু সমলয় পদ্ধতিতে কোনো একটি এলাকার পাশাপাশি ছোট ছোট জমিগুলো আল ঠিক রেখেই চাষাবাদের জন্য একই সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা হয়। এতে জমি বড় হওয়ায় একসঙ্গে কৃষকেরা সবাই মিলে একই জাতের ধান একই সময়ে আবাদ করবেন।
এই পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধান কাটা—সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে করা হবে। ফলে ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগছে। এতে কৃষক লাভবান হবেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে একদিকে ধানের নতুন নতুন জাত দ্রুত সম্প্রসারণ এবং ধান চাষে যন্ত্রের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
সম্প্রতি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সমলয় পদ্ধতিতে এই চাষাবাদ দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে এবার নিজের জমিতে বোরো আবাদ করেছেন টুঙ্গিপাড়ার কুশলী ইউনিয়নের সেলিম বিশ্বাস। নিজের জমির ধানের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, ছোট জমিতে আবাদ করা খুব কষ্ট। খরচ বেশি। তাই ধান লাগিয়ে আর লাভ থাকে না। তিনি বলেন, অনেক কৃষকের ছোট জমি একসঙ্গে আবাদ করলে খরচ কম হয়। একই কথা বললেন কৃষক মিঠুন শেখ। তিনি বলেন, ধান তো এবার অনেক ভালো হইছে। খরচও কম হইছে। যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাটা হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে মাড়াইও করা হয়ে গেছে।
সেলিম বিশ্বাস ও মিঠুন শেখের সঙ্গে সমলয় পদ্ধতিতে আবাদ করেছেন এই এলাকার আরেক কৃষক ইদ্রিস শেখ। তিনি বলেন, তার জমি ৭৮ শতক। আগে নিজেই জমি আবাদ করতাম, কিন্তু এককভাবে আবাদ করায় খরচ অনেক বেড়ে যায়। তাই অন্য কৃষকদের সঙ্গে সমলয় পদ্ধতিতে আবাদ করেছি।
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে সারা দেশে ৬১টি জেলার ১০০টি জায়গায় এবার সমলয় পদ্ধতিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বাস্তবায়নেই সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২টি জেলায় প্রথম সমলয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম প্রদর্শনী আকারে বাস্তবায়ন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এতে বিভিন্নভাবে কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।