ডিবিসি নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনেছেন ডিসেম্বরে। হানাদারদের লজ্জায় ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছেন; না খেয়ে না দেয়ে লুকিয়ে থেকে, জীবন বাঁচানোর যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন; সারা দেশে রাজাকারদের নিত্য হামলার কবল থেকে গ্রামগঞ্জের নিরীহ মানুষকে বাঁচিয়েছেন; আলবদর-আলশামস বাহিনীর নৃশংস অত্যাচার আর বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে বধ্যভূমিতে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখার মতো বর্বরতা থেকে রেহাই দিয়েছেন। বিজয়ের মাসটি আরও কয়েকটি কারণে আনন্দের।
যে রেসকোর্স ময়দানের কালীমন্দিরে হানাদাররা অগণিত নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, সে মন্দিরের পাশেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
আজ ১ ডিসেম্বর, বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসের শুরু। ১৯৭১ সালের এই মাসে বাঙালি জাতির জীবনে এসেছিল এক মহান অর্জনের আনন্দ। ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বিশ্বের বুকে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশ নামে মানচিত্র রচনা করার ইতিহাস। পাকিস্তানিদের ২৩ বছরের শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচার-নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বরে। এবার ১৬ ডিসেম্বরে পালিত হবে স্বাধীনতার ৪৬তম বার্ষিকী। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করে হানাদার বাহিনী।
শুরু হয় “অপারেশন সার্চলাইট” নামে ইতিহাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এরপরই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা প্রতিরোধ। দেশকে স্বাধীন করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিভিন্ন বয়সী শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ। ডিসেম্বরে বিজয়ের শেষ সময়ে এসে পিছু হটতে থাকে হানাদার বাহিনী। একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী দেশকে মেধাশূন্য করতে তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের সহযোগিতায় এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেও শেষ রক্ষা হয়নি হানাদারদের। শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বরেই পর্যুদস্ত হতে হয় তাদের।
৯ মাস যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর আসে মুক্তির স্বাদ। এদিন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয় বাঙালির বিজয়। এরপর স্বাধীন স্বভূমে ফিরে আসে ভারতের শিবিরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করা প্রায় কোটি নর নারী। প্রবাসী মুজিবনগর সরকারও দেশে ফিরে এসে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এদিকে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা, আলোচনা সভা, বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ, র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি। আজ ১ ডিসেম্বরে জাতীয় ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বর্নাঢ্য আয়োজনে পালিত হবে বিজয়ের মাসের প্রতিটি বিশেষ দিবস।
সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে থাকবে নানা কর্মসূচি। প্রাণের গভীর থেকে সারা মাসজুড়েই ঘরে ঘরে বাজবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’ ডিসেম্বর হোক মুক্তিযুদ্ধের দেশপ্রেমের চেতনায় অনুপ্রাণীত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্লাটফর্ম। সকল শহীদ এবং গাজী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।
সূত্রঃ ইতিহাস থেকে।