নিজস্ব প্রতিবেদক : নানা অনিয়ম-দুনীতির অভিযোগে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। রোববার দুপুরে দুদকের রাজশাহী জেলা সম্বনয়কারি আমির হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযানকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের নভেম্বরে নিয়োগ পাওয়া ২১ জন কর্মকর্তার নিয়োগ ফাইল, টেন্ডার ও কেনাকাটার ফাইলসহ বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করেছে দুদকের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে অনুসন্ধান শেষে পরবর্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের রাজশাহী জেলা সম্নয়কারী আমির হোসেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি রামেবির বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনুষন্ধান চালতে এই অভিযান। এর বেশিকিছু বলতে চাননি দুদকের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, রামেবির সূত্রমতে, দুদকের অভিযানকারী দল রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ফাইল নিয়ে গেছেন। তার মধ্যে রয়েছে, গত বছরের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি পদে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগের টেন্ডারের কাগজপত্র। নিয়ম অনুযায়ী ওই টেন্ডারটি পাওয়ার কথা ছিল ধলেশ্বরি সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লিনিং সার্ভিস লিমিটেডের। কিন্তু রামেবির একটি চক্র টেন্ডাররের কাগজপত্র টেম্পারিং করে ওই কোম্পানীকে কাজ দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ নিয়ে কম্পানীর পরিচালক আতিকুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেন উপাচার্যের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই টেন্ডারটি বাতিল করা হয়। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অপরদিকে, গত বছরে নিয়োগ পাওয়া সেকশন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ৮ মাসের মধ্যে মাত্র ৬৮ দিন অফিস করলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত বছরে ২১ জনকে দেওয়া ওই নিয়োগেও বড় ধরনের অনিয়ম রয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ১৯ জন কর্মরত আছেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন যোগদান করেননি আরেকজন চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
এছাড়াও দফায় দফায় একই ব্যক্তিদের অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েও বড় ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে। এর বাইরে বিশ^বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদের ৬ জন ডিনকে অবৈধভাবে দেওয়া সম্মানীর অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ফেরত নিতে বললেও সেটি আদায় করেনি কর্তৃপক্ষ। উপরুন্ত ওই ৬জন ডিনকে এখনো মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ওই ফাইলও নিয়েছে দুদক।
রামেবি সূত্রমতে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুটি ওয়েমার্ক মেশিন কেনা হয়। ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার এ মেশিন সরবরাহের কাজটি দেওয়া হয় ঢাকার এমআরএম এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। কোরিয়ান কম্পানীর ওই মেশিন দুটি সরবরাহের কথা টেন্ডার চুক্তিতে উল্লেখ থাকলেও মেশিন সরবরাহ করা হয় চাইনা কম্পানীর। কম দামের মেশিন সরবরাহ করা হলেও পুরো বিলই পরিশোধ করা হয়। আর বিল পরিশোধের জন্য ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অংকের ঘুষ। দুদক ওই টেন্ডারের ফাইলও জব্দ করেছে। এর বাইরে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল জব্দ করেছে দুদক। যেসব খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে।
রামেবির রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল কাদের বলেন, দুদকের একটি দল আমাদের অফিসে এসেছিল। তারা বেশকিছু কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এর বেশিকিছু বলতে পারব না।