নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এত দিন ডেঙ্গু রোগীদের ভ্রমণ ইতিহাস থাকলেও এখন রাজশাহীতেই স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে একসময় তাঁদের সেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে এ উদ্বেগের কথা জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে গত মঙ্গলবার একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি জরুরি ভিত্তিতে সচেতনতা বাড়ানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, ‘১৫ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৯ জন ডেঙ্গু রোগীই ঢাকা ভ্রমণকারী। বাকি চারজন ঢাকা ভ্রমণ করেননি। হাসপাতালে বিশেষায়িত ওয়ার্ড প্রস্তুত করে ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আইসিইউসহ অন্যান্য সেবাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগ ছড়াতে শুরু করেছে। ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত রোগ, যা নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে মশকনিধন, সচেতনতা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
রাজশাহীতে আক্রান্ত চার ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে একজনের বাড়ি নগরের রাজপাড়া এলাকায়। আক্রান্ত শিশুর বয়স মাত্র সাত মাস। ওই শিশুর বাইরে ভ্রমণের ইতিহাস নেই। তবে ঈদের ছুটিতে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বাবা-মায়ের সঙ্গে এক দিনের জন্য গিয়েছিল সে। ওই শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। আরেকজনের বাড়ি নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায়। ওই ব্যক্তির বয়স ৪৩। তাঁরও রাজশাহীর বাইরে ভ্রমণের ইতিহাস নেই। আক্রান্ত অন্য দুজনের বাড়ি রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর ও বাঘা উপজেলায়। তাঁদেরও বাইরে ভ্রমণের ইতিহাস নেই।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার ডেঙ্গু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে নতুন করে আরও সাতজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ১৪ জন। এর মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। নতুন ও পুরোনো রোগী মিলিয়ে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। সব মিলিয়ে ১৫ জুন থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন। এর মধ্যে ৪২ জন হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর একজন মারা গেছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, এত দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকার। তাঁদের ঢাকা ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাজশাহীতেই আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এটা উদ্বেগজনক।
এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ের উদ্যোগে নগরে সপ্তাহব্যাপী এডিস মশার লার্ভা অনুসন্ধান করা হয়েছে। নগরের ৫টি ওয়ার্ডের ১৫টি এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে ২৮টিতেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। যদিও নগরের কোন কোন এলাকায় তা পাওয়া গেছে, তা নির্দিষ্ট করে জানাননি তাঁরা। এ ঘটনায় গত সোমবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তাঁরা।
এদিকে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কয়েক দিন ধরে মাইকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বুধবার থেকে নগরের ১২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত দুই দিনে ওই কেন্দ্রগুলোতে মাত্র ১০ জন পরীক্ষা করিয়েছেন। এতে কারও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়নি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে সব দপ্তরের সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা করেছেন। আগামী শনিবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এ এফ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, নগরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দুজন ব্যক্তির ব্যাপারে তাঁরা জেনেছেন। অন্য দুজন রাজশাহী সিটির বাইরের। ইতিমধ্যে তাঁরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিয়মিত নালা পরিষ্কার করা হচ্ছে। অনেক সভা করেছেন। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ডেঙ্গু পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু সচেতনতায় শহরে মাইকিং চলছে। কেউ যাতে পানি জমিয়ে না রাখেন, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, কোনোভাবেই যাতে ডেঙ্গু ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য তাঁরা শনিবার থেকে নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারও বাসাবাড়ি-স্থাপনায় জমানো পানি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।