শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার ঢাকার কাওলায় আওয়ামী লীগের সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গত ৭ অক্টোবর এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। তবে অতি বৃষ্টির কারণে ওই সময় তা স্থগিত করা হয়।
বিএনপি বিদেশে ‘ধরনা দিচ্ছে’ অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ওইসব ধরনা কাজে লাগবে না। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি, তাদের প্রতিই আমার আস্থা।
“আমার একটাই কথা, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। তারা ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। আমরা চাই নৌকা মার্কায় ভোট; আবারও যেন আপনাদের সেবা করতে পারি।”
সরকারের তিন মেয়াদে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নৌকা হচ্ছে একটি মার্কা; যে মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, পানির সমস্যার সমাধান করেছে, যোগাযোগ সহজ করেছে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
“নৌকা মার্কা ক্ষমতায় থাকলে সব হবে। আর ওই লুটেরা, খুনি, দুর্নীতিবাজ, চোর, এরা ক্ষমতায় আসলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। আপনাদের কাছে ওয়াদা এরা যেন দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে একমাত্র নৌকা মার্কা। আপনাদের কাছে এটাই আমার আবেদন থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে বিএনপির নির্বাচনে আসা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণ ‘তাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন’। তিনি বলেন, “আমি জানি আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে কি, আসবে না, এটাতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে। খুব স্বাভাবিক তারা যে নির্বাচন করবে, তাদের নেতাটা কে? তাদের প্রধানমন্ত্রী কে? প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
“ওই দুর্নীতিবাজ পলাতক আসামি না এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী? সে নাকি যায় যায়। আরেকটা পলাতক। তাহলে কে করবে?”
দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা হওয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভোটে অযোগ্য। গত নির্বাচনেও তিনি অংশ নিতে পারেননি এ কারণে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দুর্নীতির একাধিক মামলায় দণ্ডিত, ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা মামলাতেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তার। দেশের বাইরে থাকায় তিনি আইনের দৃষ্টিতে পলাতক এবং এ কারণে আপিলও করতে পারছেন না। ফলে তার পক্ষেও ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, এ কারণেই নির্বাচন বানচাল করতে চায় বিএনপি। তিনি বলেন, “তারা জানে নির্বাচন হলে নৌকা মার্কা ভোট পাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে, দেশের উন্নয়ন ত্বরাণ্বিত হবে।
“তাই তারা নির্বাচনকে নষ্ট করতে চায়, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। এটা যেন করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।“
নেতা কর্মীদের উদ্দেশে করে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা আমাদের কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন যে, উন্নয়ন চাইলে নৌকা মার্কা, ধ্বংস চাইলে বিএনপি-জামায়াত।
“কাজেই সেই দিকে লক্ষ্য রেখে আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেন।”
এরপর শেখ হাসিনা উপস্থিত হাজারো নেতা-কর্মীকে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা সবাই কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন?” নেতা-কর্মীরা হাত নেড়ে সমর্থন জানায়।
শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু নিজে দিলে হবে না, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব… দেশে বিদেশে প্রচার করতে হবে, এ দেশের উন্নয়নে একমাত্র আওয়ামী লীগই আছে, তারাই গণতন্ত্র দিতে পারে।”
রাজধানীর যানজট কমাতে আগামীর পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন একটি এক্সপ্রেসওয়ে করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো জমি অধিগ্রহণ করে না, পুরো ঢাকা ঘিরে হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সেটার জন্য চিন্তাভাবনা আছে, আমরা কাজ করছি।”
রেললাইনের কারণে ঢাকায় যেসব এলাকায় যানজট হয়, সেসব এলাকা ঘিরেও বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “দক্ষিণ খান, উত্তর খানসহ বিভিন্ন জায়গায় রেললাইন আছে, এখানে অসুবিধা, যানজট হয়। যেখানে যেখানে রেলগেট সেখানে আমরা ওভারপাস করে দেব। যাতে যোগাযোগে অসুবিধা না হয়, রেলের জন্য আটকে না থাকতে হয়।”
নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতির বিষয়টিও উঠে আসে শেখ হাসিনার দীর্ঘ বক্তব্যে। এ জন্য তিনি দায়ী করেন মজুতদার ও কালোবাজারিদের।
তিনি বলেন, “অনেক সময় দেখি অনেকে কোনো কোনো জিনিস মজুদ করে। কে, কোথায় মজুত রেখে পেঁয়াজ পচাবে, ডিম পচাবে, আর মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে। এটা চলবে না।
“ওই মজুদ যারা করে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব, যথাযথ সাজার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়।”
এই অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খালেদা জিয়ার আমলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোড়, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট, নাইকো, গ্যাটকো সবকিছুতে তারা দুর্নীতি করেছে।
“বিদ্যুতে বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল, সড়কে টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল। ওদের ওই মেরুদণ্ড ছিল না যে, তারা চ্যালেঞ্জ করে। কারণ, তারা তো দুর্নীতিবাজই ছিল। জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেছিল।”
আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক, দুর্নীতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করতে আসেনি, মানুষের সেবা করতে ক্ষমতায় এসেছি। তাই আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, বলেছিলাম বের করো তোমাদের ডকুমেন্ট, তোমরা দুর্নীতি পেয়েছ কি না। কানাডার আদালত রায় দেয় বিশ্ব ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া।”