নিউজ ডেস্ক: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে ১৫ বছর ধরে কারাগারে। তার ব্যবহৃত একটি গাড়ি এখনও পড়ে আছে সচিবালয়ের ভেতরে। বাবরের গ্রেপ্তারের পর এটির মালিকানা কেউ দাবি করেনি।
২০০৭ সালে বাবর গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায়। বর্তমানে সচিবালয়ের ক্লিনিক ভবনের পেছনে রাখা হয়েছে দুটি গাড়ি। এর একটি আকাশি রঙের মিৎসুবিসি পাজেরো, আরেকটি সাদা রঙের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার।
এ দুটি গাড়ির মধ্যে আকাশি রঙের গাড়িটিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবর চড়তেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় গাড়িটির ওপর জমেছে ধুলার আস্তরণ। টায়ার বসে গেছে। গাড়ির আসনের আবরণ জরাজীর্ণ। জানালার কাচে ধুলার পুরু স্তর। অনাদর-অবহেলায় পড়ে থাকা গাড়িটি সাক্ষ্য দিচ্ছে বাবরের দুর্দিনের।
গত ৫ এপ্রিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই গাড়িটিসহ সচিবালয়ে অকেজো পড়ে থাকা ২৩টি গাড়ি অপসারণের নির্দেশ দেয়। সে সময় জারি করা এক আদেশে এক মাসের মধ্যে এই গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো গাড়িই শেষ পর্যন্ত সরানো হয়নি।
সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সচিবালয়ে অনেকগুলো বিকল গাড়ি পড়ে আছে। এর মধ্যে ক্লিনিক ভবনের পেছনে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের গাড়িটিও আছে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নানা জটিলতায় অন্যান্য গাড়ির মতো এটিও সরানো যায়নি। দ্রুত এটি সরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’
যে দুটি মামলায় বাবরের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে, সেগুলো হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা। দুটি মামলাই এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের আরেক মামলায় তার আট বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই দুদকের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন লুৎফুজ্জামান বাবর। এর পর থেকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে। তাকে সবশেষ প্রকাশ্যে দেখা গেছে গত বছরের ১২ অক্টোবর।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তাকে যখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল ৪৩ বছর। এ নিয়োগ অনেককে বিস্মিত করেছিল, কেননা জাতীয় রাজনীতিতে তখনও তিনি নিতান্ত অপরিচিত মুখ। নেত্রকোণা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের বাইরে তার তেমন কোনো পরিচিতি ছিল না।
মনে করা হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ক্ষমতার সমান্তরাল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত ‘হাওয়া ভবনের’ সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই ছিল বাবরের দোর্দণ্ড প্রতাপ হয়ে ওঠার উৎস। নানা রকম বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যও তিনি সে সময় আলোচিত হয়ে ওঠেন।