নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা :
বাগমারায় এবার সত্তর বছরের এক বৃদ্ধাকে ধর্ষণ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষণের এই অভিযোগে রবিবার বিকেলে বাগমারা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি দায়ের করেছেন ওই বৃদ্ধার বড় মেয়ে। পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেছে এবং ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে(ওসিসি) চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার দুপুরে তাহেরপুর পৌরসভার চৌকিরপাড়া মহল্লায়।
পুলিশ ও মামলার বাদী সূত্রে জানা গেছে, চৌকিরপাড়া মহল্লার সুলতান এর পুত্র লোকমান ওরফে রুকু (৪০) গত শুক্রবার সকালে তার প্রতিবেশি জনৈকা সত্তরোর্ধ বিধবা নারীকে তার বাড়িতে চাল ঝাড়ার জন্য ডাক দেয়। বিধবা সকাল থেকে দুপুর অবধি রুকুর বাড়িতে চাল ঝাড়ার কাজ করে। বেলা বারোটার দিকে রুকু তার বাড়িতে বিধবাকে রেখে পাশ্ববর্তী মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে যায়।
বেলা দুইটার দিকে রুকু বাড়িতে এসে বিধবাকে তার চাল ঝাড়ার মজুরী বাবদ কিছু চাল ও নগত টাকা হাত ধরিয়ে দেয়। এসব নিয়ে বিধবা বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রুকু পিছন থেকে বিধবার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এতে বিধবার কাপড়ে রক্তের দাগ লেগে যায় এবং সে অসস্থ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বিধবা কোনরকমে ওঠে বাড়িতে গিয়ে বারান্দায় শুয়ে পড়ে।
এ সময় বাড়িতে থাকা তার বড় মেয়ে মায়ের অসুস্থভাব লক্ষ্য করে এবং রক্তের দাগ দেখে তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বিধবা জানায় রুকু তার এই সর্বনাশ করেছে। এ সময় বিধবার মেয়ে মহল্লার পল্লী চিকিৎসক ডা: রনিকে খবর দিয়ে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় বিধবার ছোট ছেলে ও বড় মেয়ে বিষয়টি তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদতে অবহিত করেন। মেয়র কালাম ওই দিন রাত আটটার দিকে তাহেরপুর হরিতলা মোড় আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয়ে একটি শালিসী বৈঠক ডাকেন।
বিধবার ছেলে জানায়, ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে আমরা পার্টি অফিসে উপস্থিত হলে মেয়র কালাম আমাদের সামনে রুকুকে চড় থাপ্পর মেরে তাকে মেঝেতে বসায় এবং বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে আমাদের ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমরা মেয়রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পরদিন সকালেই মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করি। বিধবার ছেলে ও মেয়ে জানায়, আমার গরিব মানুষ। রুকু মেয়রের নিজস্ব লোক। সে আওয়ামীলীগ অফিসেই দপ্তরীর কাজ করে। তাই মেয়র তার পক্ষ নিয়েছেন। আমরা নিরুপায় হয়ে ন্যায় বিচারের জন্য থানায় অভিযোগ নিয়ে এসেছি।
এ দিকে সত্তরোর্ধ ওই বৃদ্ধার ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ায় তাহেরপুর বাজার ও আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার একাধিক ব্যক্তিরা জানান, রুকুর নামে এমন বদনামে তারা হতবাগ হয়েছেন। অনেকে তাকে নিয়মিত নামাজ পড়তে মসজিদেও দেখেছেন ।ঘটনার দিনেও সে জুম্মার নামাজ পড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
স্থানীয়রা আরো জানায়, রুকু বিবাহিত । সে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বছর দুই আগে তার স্ত্রী সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলে রুকু আর বিয়ে করেনি। মাস দুয়েক আগে রুকু তার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে স্বেচ্ছায় আওয়ামীলীগ অফিসের দপ্তরীর কাজ ছেড়ে দিয়ে সংসার দেখাশুনা করে চলত।
এ দিকে মামলা দায়েরের পর থেকে রুকু গ্রেফতার এড়াতে গাঢাকা দিয়েছে বলে জানান, থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক(এসআই) ফরিদা ইয়াসমীন। তিনি আরো জানান, রুকুকে গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে নেমেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রুকুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে সেটি বন্ধ থাকায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষয়টি রহস্যজনক। মাস দুয়েক আগে রুকু আওয়ামীলীগ অফিসের দপ্তরীর কাজ ছেড়ে দেয়। ওই সময় সে তার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে ছোট ছেলেকে লিখাপড়া শিখায় ও সংসার দেখাশুনা করে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়ে।
রুকুর নামে এমন অভিযোগকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবী করেন মেয়র। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি রুকুর নামে এমন অভিযোগ আসায় শাসন করে তাকে চড় থাপ্পর দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ভিকটিম পরিবারকে ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, মামলটি এজাহার হিসাবে গ্রহন করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।