নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পুঠিয়ায় প্রথম ধাপে পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই পৌরসভায় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তারা দুইজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে দলীয় প্রার্থী নিয়ে অসন্তস রয়েছে দুই দলেই। এছাড়াও বিএনপির একক হলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দুইজন।
তফসিলের আগে থেকেই এই পৌরসভায় সক্রিয় ছিলো আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। আর দীর্ঘ দিন এলাকায় কোন কার্যক্রম করতে পারেনি বিএনপির কোন প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে বিএনপির একক প্রার্থী হওয়ায় সুবিধা জনক অবস্থায় আছে তারা। যদিও দলীয় প্রার্থী নিয়ে সন্তস রয়েছে দলটিতে। আর দলীয় প্রার্থী বিপক্ষে বিদ্রোহী নিয়ে শক্ত অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগের একটি অংশ।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বিএনপির প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিদ্রোহী দুই প্রার্থীও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল।
এবার পুঠিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি। বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন খান। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা হলেন- যুবলীগ নেতা গোলাম আজম নয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম টিপু।
বিপরীতে দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকায় বিএনপি প্রার্থীদের কোন তৎপরতা ছিল না। হঠাৎ মনোনয়ন পেয়ে একক প্রার্থী নিয়ে তারা এখন নির্বাচনের মাঠে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। আর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দলীয় কোন্দলে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, এবার পৌরসভায় সুষ্ঠ ভোটে হলে তারা বিজয়ী হবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দাবি বিএনপির প্রার্থীরা এলাকায় কোন কাজ করেনি জনগণ তাদের পাশে নেই! দীর্ঘ দিন জনবিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বিএনপির প্রার্থী ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারবেন না।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুঠিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ২৭১ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী আসাদুল হক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী রবিউল ইসলাম। এই ফলাফলের পর পুঠিয়ার পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আসাদুল হক।
কিন্তু ভোট গণনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন রবিউল ইসলাম। আদালতের আদেশে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট গণনা করা হয়। এতে বিজয়ী হন রবিউল। এবার সেই আসাদের আস্থা রাখেনি বিএনপি। জেলা বিএনপির নেতারা আল মামুন খানকে সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে আল মামুন খান মনোনয়ন পাওয়া ভেতর ভেতরে এলাকায় ব্যাপক কোন্দলও সৃষ্টি হয়েছে থানা বিএনপি নেতাদের মাঝে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন থানা বিএনপির নেতারা বলেন, বিএনপির যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে তার পক্ষে অনেক নেতা কর্মী মাঠে নামবে না। এই প্রার্থী একক ভাবে দেওয়া হয়েছে। যা তৃণমূল বিএনপির নেতাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এই জায়গায় অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মাঝে সতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল করলে সুবিধায় থাকবে নৌকার প্রার্থী।
পুঠিয়া পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান মেয়র থানা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি বলেন, উপজেলার নেতাকর্মী তৃণমূল সব সময় আমার পাশে আছে। আমিও একদম তৃণমূল থকেই দীর্ঘ দিন ধরেই মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে সবসময় থেকেছি।
আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনকে নিয়ে আমি নির্বাচনের জন্য কাজ করছি। এলাকার জনগণ আমায় ভালোবাসে আমার কাজের জন্য তাদের কাছে আমি সবচেয়ে এগিয়ে। তাই আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আর বিএনপির প্রার্থীকে এলাকাতেই দেখা যেত না। সাংগঠনিক কার্যক্রম তো দূরে থাক!
বিএনপির প্রার্থী আল মামুন খান জানান, আমি মনোনয়ন পাওয়ার বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ্যভাবে কাজ করবে। সরকার আমাদের জানিয়েছে সুষ্ঠ ভোট হবে যদি সুষ্ঠ ভোট হয় তাহলে বিএনপির বিজয় কেউ ধরে রাখতে পারবে না। বিএনপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
স্বতন্ত্র প্রাথী শরিফুল ইসলাম টিপু জানান, দল আমায় মনোনয় নেয়নি এটা দলের বিষয়। জনগণ আমায় ভালোভাসে জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই আমি নির্বাচন করছি। নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো।
এ পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী আসনে আটজন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ৩ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ ডিসেম্বর। প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১১ ডিসেম্বর। এর পরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। প্রতিটি পৌরসভাতেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে।