নিউজ ডেস্ক: দেশে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ৩৭০ জনের মৃতু্য হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ২৫১ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৫ হাজার ১২১ জনে। মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাসবিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে আরও নয় হাজার ৯১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আট হাজার ৪৪৯টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ৯৩ হাজার ৬৪৫টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ২৫১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ১২১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ২১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৪০৮ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন চার হাজার ৯৯৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের ১৩ জন হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেছেন, তিনজন বাসায় এবং পাঁচজন হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এসেছেন। বয়সের দিক থেকে একজন ১১ থেকে ২০ বছরের, দুজন ২১ থে?কে ৩০ বছরের, দুজন ত্রিশোর্ধ্ব, পাঁচজন চলিস্নশোর্ধ্ব, পাঁচজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, চারজন ষাটোর্ধ্ব এবং দুজন সত্তরোর্ধ্ব।
এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের চারজন এবং ময়মন?সিং?হ, ব?রিশাল ও খুলনা বিভা?গের একজন ক?রে রয়েছেন। ঢাকা বিভাগের মধ্যে রাজধানীতে সাতজন এবং জেলায় দুজন, নারায়ণগঞ্জে দুজন, গাজীপুরে দুজন ও নরসিংদীতে একজন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় একজন, কুমিলস্না জেলায় দুজন, চাঁদপুরে একজনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া অন্য তিন বিভাগের মধ্যে শেরপুর, বাগেরহাট ও ঝালকাঠিতে একজন করে মারা গেছেন।
গত সোমবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন মারা গেছেন। নয় হাজার ৭৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬০২ জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত কমলেও মৃতু্য হয়েছে সমানসংখ্যক মানুষের।
মঙ্গলবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে আরও ৩২৬ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন তিন হাজার ৬১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯৩ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন এক হাজার ৭৯৩ জন।
সারা দেশে আইসোলেশন শয্যা আছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় আইসোলেশন শয্যা বেড়েছে চার হাজার ১৫০টি। মোট আইসোলেশন শয্যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় সাত হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে আছে ছয় হাজার ৩৪টি।
এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৯৯টি। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা বেড়েছে ৬০টি। ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০৪টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন হাজার ৫৩১ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৪৯১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৭০২ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৯৬ হাজার ২৭৪ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৫১ হাজার ২১৭ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য ৬২৭টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৮৪০ জনকে।
ডা. নাসিমা সুলতানা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান বুলেটিনে।
চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪৯ লাখ। মৃতের সংখ্যা তিন লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ১৯ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তারপর দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। লম্বা হচ্ছে মৃতু্যর মিছিলও।