দুর্গাপুর প্রতিনিধি : রাজশাহীর দুর্গাপুরে বীর মুক্তিযেদ্ধা আ. ন. ম নুরুল আলম হিরু মাস্টারকে লাঞ্ছিতকরে তার পরিবারে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দুর্গাপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার দুপুরে দুর্গাপুর প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লাঞ্ছিতর শিকার মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম হিরু মাস্টার। হিরু মাস্টার বলেন, আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শাহ-আলম, রাজীব, মমিন, হারুন, মামুন, হাসান, মইদুল, আজিজ, নিলয় ও শাকিল পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সসন্ত্রাসী কায়দায় অতর্কিত ভাবে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম হিরু মাস্টারের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় বাড়িতে থাকা তার ছোট ছেলে শফিউল অলম লিখন (৪০) বাধা দিতে গেলে শাহ আলমের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে লিখনের বাম পায়ের হাঁটুর মালয় ভেঙে দেয়। সেই সাথে এলোপাতাড়িভাবে ব্যাপক মারপিট করলে সে জ্ঞানশূন্য অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম হিরু ও তার স্ত্রী হাওয়া বেগম তাদের বাধা দিতে গেলে তাদেরকে লাঞ্ছিত করে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। সেই সাথে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরবর্তিতে তারা সকল আসবাবপত্র ভাঙচুর করে বাড়িতে রক্ষিত ১১ ভরি সোনার গহনা এবং পুকুরের মাছ বিক্রি করে জমানো নগদ ৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা লুট করে তান্ডব করতে থাকে।
এক পার্যায়ে বাড়িঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় সন্ত্রাসীরা। এমতাবস্থায় দুর্গাপুর থানার পুলিশ সংবাদ পেয়ে সেখানে উপস্থিত হলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তিতে পুলিশের সহায়তায় আহত লিখনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হায়। বর্তমানে সে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালের ৩১ নং ওয়ার্ডের ৪০ নং মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এই বিষয়ে সেই দিনই রাতে দুর্গাপুর থানায় ১২জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা হিরু মাস্টার। মামলা নং ১১/৩১।
এ ঘটনায় পরবর্তীতে আসামীরা মুক্তিযোদ্ধা হিরু মাস্টারের দুই ছেলে ও নাতিসহ কয়েকজনকে আসামী করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। হামলাকারিদের করা মামলায় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে মাননীয় আদালত তাদের জমিন মঞ্জুর করেন। জামিনপ্রাপ্ত হয়ে রাজশাহী আদালত চত্বরের প্রধান গেটে আসামাত্র আসামী রাজিব, মামুন, জনি, শাহআলম, মহিদুলসহ আরো অনেকে পুণরায় সন্ত্রাসী কায়দায় ঘিরে ধরে। এসময় মুক্তিযোদ্ধার বড় ছেলে লিটন প্রাণভয়ে দৌড়ে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। কিন্তু সাথে থাকা জামিনপ্রাপ্ত আসামী আসরাফুল ও মামুনকে জোরপুর্বক সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে ব্যাপক মারপিট করে। সেই সাথে আশরাফুলের হাতপা ভেঙে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। এসময় পথচারিদের সাহায্যে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩১ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হলেও বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেয়া হয়। এই সকল ঘটনার পর আসামীরা সার্বক্ষনিক মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম হিরু মাস্টারকে ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। যার ফলে তিনিসহ তার ছেলেরা বাড়ি ছাড়া হয়ে জীবন যাপন করছেন।
বর্তমানে তিনিসহ পরিবারের সকল সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ভুকছেন। তিনি একজন বৃদ্ধ অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নিকট তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে আকুল আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে হিরু মাস্টার ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ, হযরত আলী মাস্টার , ইনছান আলী, নাজিমুদ্দিন, সমসের আলী, শ্রী পরমেশ, মকছেদ আলী, তোফায়েল, আবুল কাশেম প্রমুখ।