স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর দুর্গাপুরে জাল দলিল তৈরি করে জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মন্দির ও কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের প্রায় ২২ বিঘা জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা জমি দখলে জামায়াত নেতা সোহরাব আলীকে নেপথ্যে থেকে সহযোগিতা করছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেছেন দুর্গাপুরের কিশমত হোজা কালিমন্দির ও মহাশশ্মান কমিটির লোকজন। তাদের সঙ্গে মুসলিম ধর্মের কয়েকজন ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত জামায়াত নেতার নাম সোহরাব আলী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর দুর্গাপুর উপজেলা শাখার সাবেক সেক্রেটারী। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় একটি মামলা হয়েছিল। মামলাটির ৯ নম্বর আসামি সোহরাব। তবে মামলাটি মিথ্যা হওয়ার কারণে খারিজ হয়ে গেছে বলে দাবি সোহরাবের। সোহরাব আলী নিজেই একজন দলিল লেখক। তাই তিনি নিজেই মন্দির ও শশ্মানের জমির জাল দলিল তৈরি করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল লতিফ। লতিফের চাচা আলীম উদ্দিন বাদী হয়ে সোহরাব আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের ওই মামলাটি দায়ের করেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মন্দির ও শশ্মানের ২২ বিঘা জমির মূল মালিক ছিলেন সুনীল কুমার, সুশীল কুমার, পরেশ কুমার ও শিতিশ চন্দ্র সিদ্ধার্থ। ১৯৬২ সালে তারা ভারতে চলে যান। এরপর জমিগুলো মন্দির ও শশ্মানের নামে পত্তন নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আর এস রেকর্ডে জমিগুলোর মালিক হয়ে যান ঘঙ্গেশ চন্দ্র নামের এক ব্যক্তি। এই ঘঙ্গেশ চন্দ্র ১৯৯৩ সালে ভারতে চলে যান। ফলে জমিগুলো শশ্মান ও মন্দিরেরই থাকে। কিন্তু দলিল লেখক সোহরাব আলী ১৯৯৫ সালে জমি ফিরে পেতে এক ব্যক্তিকে ঘঙ্গেশ চন্দ্র সাজিয়ে মামলা করান। পরে আদালতে তাদের পক্ষে রায় হয়। এরপর এসব জমি নিজের নামে নিয়ে নেন সোহরাব। সবশেষ ২০১৮ সালে নিজের নামে জমিগুলোর খারিজ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সহযোগিতায় জামায়াত নেতা সোহরাব জমিগুলোর দলিল করে নিজ নামে নামজারি করে নিয়েছেন। এখন শশ্মানের ওপর চাষাবাদ হয়। হিন্দুধর্মের কেউ মারা গেলে এখন কবরস্থ করার মতো কোন জায়গাও নেই। মন্দিরের সামান্য জায়গাটুকু ছাড়া সবই দখল করে নিয়েছেন জামায়াত নেতা সোহরাব আলী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শশ্মান ও মন্দিরের সব জমি ব্যবহার করতে চাইলে জামায়াত নেতা সোহরাব হিন্দু ধর্মের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে থাকেন। এলাকা থেকে সবাইকে উচ্ছেদ করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। এসব বিষয় জানিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে মন্দির কমিটির সদস্য রূপল কুমার, নিলয় কুমার, প্রতীক কুমার মহান্ত, নিতাই কুমার হালদার, এলাকার বাসিন্দা মোজাহার আলী, নাদের সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত নেতা সোহরাব আলী বলেন, জমির মূল মালিক আদালতে মালিকানা ফিরে পান। এরপর তিনিসহ কয়েকজন তার কাছ থেকে জমিগুলো কিনে নিয়েছেন। জাল দলিল করে দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা বলে দাবি তার।
তবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।