দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: দুই বছর আগে প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে তিন শিক্ষক-কমর্চারীর ফাঁকা চেকের বিপরীতে সুদ কারবারি মাসুদ রানা ওরফে মাসুমের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছিলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন। দুই বছরে দফায় দফায় ৬ লাখ টাকা সুদে-আসলে মোট ১৬ লাখ টাকা দেয়া হয় মাসুমকে। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট নন সুদ কারবারি মাসুম। তিনি আরো ৬০ লাখ টাকা দাবি করেছেন ওই তিন শিক্ষক-কর্মচারীর কাছে। টাকা দিতে না পারায় সুদ কারবারি মাসুমের হুমকী-ধামকীর প্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে যৌথভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক একেএম সাইদ ও অফিস সহকারী সাইদুর রহমান।
ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আলীপুর মডেল কলেজের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লাঞ্ছনার শিকার হওয়া শিক্ষক একেএম সাইদ বলেন, সোমবার দুপুরে প্রাতিষ্ঠানিক কাজে উপজেলায় গেছিলাম। উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটকে আগে থেকেই বসেছিলেন সুদ কারবারি মাসুম। তাঁকে দেখেই মাসুম হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বসান। এরপর সুদের টাকা পরিশোধ করতে চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষর সাথে কথা বলতে বললে মাসুম ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেন। এমনকি রশি দিয়ে বেঁধে রাখার হুমকী দেন। এ সময় মাসুমকে বাধা দিলে একই কলেজের আরবি সাহিত্যের শিক্ষক শামিনুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করে। বিষয়টি পরবর্তিতে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে জানানো হলে সুদ কারবারি মাসুম ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।
এদিকে, দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সোমবার দুপুরে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম, ইউএনও সোহেল রানা ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা লাঞ্ছনার শিকার দুই শিক্ষকের বক্তব্য শুনেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন প্রাতিষ্ঠানিক কাজে টাকার প্রয়োজন পড়ায় তিন শিক্ষক-কর্মচারীর ফাঁকা চেকের বিপরীতে গুড়খাই গ্রামের সুদ কারবারি মাসুদ রানা ওরফে মাসুমের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। জনতা ব্যাংক দুর্গাপুর শাখার সাইফুল ইসলামের নামীয় হিসাবের দুইটা ফাঁকা চেক, একই ব্যাংকের একই শাখার একেএম সাইদের দুইটা ফাঁকা চেক ও পুবালী ব্যাংক সেরিকালচার শাখার সাইদুর রহমানের নামীয় হিসাবের দুইটা ফাঁকা চেক নেন মাসুম। টাকা গুলো প্রতিষ্ঠানের কাজেই ব্যবহার করা হয়েছিলো বলেও জানান সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে দুই বছরে দফায় দফায় ১৬ লাখ টাকা দেয়া হয় মাসুমকে। তারপরও মাসুম আরো ৬০ লাখ টাকার দাবি করছে। বিষয়টি পুরোটাই অযৌক্তিক। এমনকি বাসায় ও কলেজে গিয়ে হত্যার হুমকী দিচ্ছে। এ কারনে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজের দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে সুদ কারবারি মাসুম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহেল রানা বলেন, লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। লাঞ্ছনার শিকার দুই শিক্ষকের বক্তব্য শুনেছি। অভিযুক্ত সুদ কারবারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করা হয়েছে। সুদ কারবারি মাসুমকে খোঁজা হচ্ছে। তাঁর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে মাসুম পলাতক রয়েছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।