নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা গ্রামে পিতার বিরুদ্ধে স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়েকে ধর্ষনের অভিযোগে সালিশী বৈঠক বসিয়ে অভিযুক্ত বাবা-মেয়েকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অপর একটি কথিত অভিযোগে এক পরিবারকে একঘরে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গ্রাম্য মাতাব্বরদের এমন আজগুবি ফতোয়া জারির পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে দুর্গাপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে উপজেলার ঝালুকা গ্রামের উত্তরপাড়ায় স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়েকে ধর্ষনের অভিযোগ উঠে নিজ পিতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পিতার ছোট মেয়ে গ্রামের মাতব্বরদের কাছে এ অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে গ্রামের মাতব্বররা ঘটনার দুই তিন দিন পর এলাকায় সালিশী বৈঠক বসান। সালিশী বৈঠকে অভিযুক্ত বাবা ও মেয়েকে হাজির করা হলে তারা ঘটনার কথা স্বীকার করে। এরপর তাদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া অভিযুক্ত বাবাকে ১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে করার নির্দেশ দেন গ্রামের মাতব্বররা। একই বৈঠকে দুই বছর আগের একটি ঘটনার কথা তুলে ধরে এলাকার কয়েজনকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। গ্রাম্য মাতব্বরদের এমন আজগুবি সিদ্ধান্তে সালিশি বৈঠকে হাজির না হওয়ায় এক পরিবারকে একঘরে করার নির্দেশ দেন গ্রামের মাতব্বররা।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভিকটিম নারী বলেন, গ্রামের মাতব্বর নবাবের বাড়িতে রাত ৮ টার দিকে সালিশী বৈঠক বসিয়ে গ্রামের মাতব্বররা তাদের তওবা পড়িয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গ্রাম্য মাতব্বর আমজেদ আলী, আজিত আলী, জাবেদ আলী, রুস্তম আলী ও শুকুর উদ্দিন। আব্দুল নামের একজন মাওলানাকে ডেকে তাদের তওবা পড়ানো হয়। এছাড়া যতদিন বিয়ে না হয় ততদিন বাবা-মেয়েকে আলাদা থাকতে হবে এবং ১৫ দিনের মধ্যে বাবাকে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে না করলে তাদের (বাবা-মেয়েকে) গ্রাম ছাড়া হতে হবে। গ্রাম্য মাতব্বরদের এমন ফতোয়া জারির পর থেকে বাবা মেয়েকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ওই ঘটনার জের ধরে দুই বছর আগের মিথ্যা অভিযোগ তুলে এলাকার কয়েকজন যুবকের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করেন গ্রামের মাতব্বররা। গ্রামের মাতব্বরদের অভিযোগ, ওই যুবকরা এর আগে ভিকটিম নারীর সাথে একজন যুবকের শারীরিক সম্পর্কের মিটমাট করে দেবার নাম করে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। এজন্য সালিশ বসিয়ে তাদের বিচার করা হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝালুকা গ্রামের উত্তরপাড়ায় সালিশ বৈঠক বসানো হয়। সালিশি বৈঠকে উপস্থিত না থাকার অভিযোগ এনে এক পরিবারকে একঘরে করার নির্দেশ দেন গ্রাম্য মাতব্বরা।
অভিযোগ উঠেছে, ঝালুকা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইমরান আলী বিচারের মুখোমুখি করার ভয় দেখিয়ে কয়েকজন যুবকের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করেন। চাঁদার টাকা না পেয়ে তিনি গ্রাম্য মাতব্বরদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সালিশী বৈঠক ডাকতে বাধ্য করান।
গ্রাম্য সালিশে উপস্থিত এক মাতব্বর নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নব খাতুন ঘটনার কথা স্বীকার করলেও ওই ওই সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন, এ ধরনের ঘটনার কথা শুনেছি। গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে এ ধরনের বিচার করার এখতিয়ার মাতব্বরদের নেই। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। ভুক্তভোগী কেউ গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ওসি।