নিউজ ডেস্ক: লেকের পানিতে পড়ে যাওয়া সহকর্মীর দুই সন্তানকে উদ্ধারের পর নিজেই লেকের গভীরে তলিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে জাপানের রেকুটেন কোম্পানির সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল কবির (৪১) এর। গতকাল রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে সিজুওকা প্রিফিকসার লেকে ডুবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত খাইরুল কবির পাবনা শহরের শালগাড়িয়া রেনেসাঁ পাঠাগার এলাকার সাবেক মিলিটারি একাউন্টস অফিসার মরহুম আবুল কাশেম শিকদারের দ্বিতীয় ছেলে। খাইরুল পাবিপ্রবি’র প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর ড. আমিন উদ্দিন মৃধার ভাগনে এবং দৈনিক যুগান্তর ও চ্যানেল আই’র পাবনা প্রতিনিধি আখতারুজ্জামান আখতারের মামাতো ভাই।
পারিবারিক সূত্র জানায়, অত্যন্ত মেধাবী খাইরুল কবির ৭ বছর আগে জাপানের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি রেকুটেনের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি স্বপরিবারে টোকিও’র মাসিদাতে বসবাস করতেন।
রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় জাপান প্রবাসী বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন এবং সহকর্মীদের সঙ্গে তারা স্বপরিবারে বেড়াতে যান জাপানের সিজুওয়াকা প্রিফিকসার লেকে। ওই লেকটি একটি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসগরে যুক্ত হয়েছে। বেড়ানোর এক পর্যায়ে খাইরুল কবিরের দুই বন্ধু ও সহকর্মীর দুই কিশোর ছেলে ওই লেকের পানিতে পড়ে যায়। তাদের তলিয়ে যাওয়া দেখে খাইরুল কবির পায়ের জুতা খুলে দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই ছেলে দুটিকে লেকের পানি থেকে টেনে তুলে প্রাণ বাঁচান। কিন্তু ছেলে দুটি প্রাণে বাঁচলেও তিনি আর উঠে আসতে পারেন নি। তিনি দ্রুত গভীর পানিতে তলিয়ে যান।
খাইরুলের এই তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য তার স্ত্রী সন্তানসহ অন্যরা লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে অবলোকন করলেও কেউ তাকে উদ্ধার করতে পারেন নি। খবর পেয়ে সেখানকার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থা ৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দুপুর ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। এরপর সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খাইরুলের লাশ বর্তমানে ইয়ামানাসী প্রিফেকচারের একটি হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
নিহত খাইরুলের স্ত্রী মিতু জানান, সহকর্মীর দুই সন্তানকে উদ্ধারের পর আমাদের চোখের সামনেই খাইরুল গভীর পানিতে তলিয়ে যায়। আমাদের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তারাও বাবার এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। লেকের পাড় থেকে তাদের সরানো যাচ্ছে না। আমি এখন কিভাবে ওদের সান্ত্বনা দেব।
খাইরুল কবিরের জাপান প্রবাসী স্বজন শান্ত্বা খাতুন জানান, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার অকালে চলে যাওয়ায় সেখানে এক বেদনা বিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল কবিরের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে তার পাবনা শহরের শালগাড়িয়া ও গ্রামের বাড়ি বেড়া উপজেলার দাঁতিয়া শিকদার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। খাইরুলের মা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। প্রতিবেশীরাও এই কৃতি সন্তানের এভাবে বিদায় নেয়া মেনে নিতে পারছে না। খাইরুলের লাশ কবে দেশে পাঠানো হবে-সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায় নি। তবে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে খুব দ্রুত তার লাশ দেশে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।