নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে বিচারকের মধ্যস্থতায় অধিকার ফিরে পেলেন কুলহারা এক মা। আমেনা বিবি ও আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন দম্পতির সংসারে একএক করে চার ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম হয়। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে ছেলে ও মেয়েরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হন। এরই মধ্যে আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন মারা যান। তবে রেখে যান অঢেল ধন সম্পদ ও জমিজমা। কালের পরিক্রমায় এই ধন সম্পদই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় আমেনা বিবির জীবনে। জমিজমা ও ধন সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত এ বিরোধ গিয়ে দাঁড়ায় আদালত পর্যন্ত। এক সন্তান আরেক সন্তানের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেন। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালত মিলে মোট ছয়টি মামলা দায়ের হয়।
গত বুধবার এক মামলার নিষ্পত্তি করতে মা সহ সন্তানদের আদালতে তলব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবীর। আদালতের বিচারিক কার্যক্রম শেষে বিজ্ঞ বিচারক মো. হুমায়ুন কবীর ওই মা সহ সন্তানদের নিয়ে তার খাসকামরায় মধ্যস্থতায় বসেন। আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন ও আমেনা বিবির অবশিষ্ট সম্পদ ও জমিজমা তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সুষ্ঠভাবে বণ্টন করা হলেও মায়ের দেখভালের দায়িত্ব কেউ নিতে চাননি। মায়ের প্রতি সন্তানদের এমন অবহেলা দেখে এক পর্যায়ে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মোঃ হুমায়ুন কবীর আমেনা বিবির নামে ব্যাংকে একটি হিসাব খুলতে নির্দেশ দেন এবং ওই হিসাবে মা আমেনা বিবির নামে এককালীন চার লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করার আদেশ দেন। এছাড়া চার ছেলেকে প্রতিমাসে মায়ের ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনে নূন্যতম দেড় হাজার টাকা করে দেয়ার আদেশ দেন। চার সন্তানের দেয়া ছয় হাজার ও ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে আমেনা বিবির দেখভালের আদেশও দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।
বিজ্ঞ আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবীরের এমন নজিরবিহীন আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন আমেনা বিবি। তিনি বলেন, এতদিন তিনি চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অঢেল ধন-সম্পদ ও জমিজমা থাকা সত্বেও তিনি দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিলেন। তবে আদালতের এমন আদেশে বাঁকী জীবন কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারবেন বলে মনে করেন আমেনা বেগম।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জমিজমা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা প্রত্যাহার করার আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, কোন সন্তান আদালতের আদেশ অমান্য করলে এবং বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে পরবর্তীতে ওই সন্তানের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ করার আদেশ দেবেন বিজ্ঞ আদালত।
প্রসঙ্গত, আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার স্ত্রী আমেনা বিবিও ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারে মেয়ে। মরহুম আলহাজ্ব সাজ্জাদ হোসেন দুবার পবিত্র হজ্জ পালন করেন। আমেনা বিবিও তার স্বামীর সাথে একবার পবিত্র হজ্জ পালন করেছেন।