নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার পর বুধবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে শান্তি সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশে উপজেলার ইয়াজপুর ও মোসড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা অংশ নেন। এতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোনো পরিস্থিতিতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এলাকাবাসীর উদ্দেশে পুলিশের আহ্বান, কারও উসকানিতে যেন তাঁরা উত্তেজিত না হন। কোনো কিছু ঘটলে নিজেরা মীমাংসা করতে না পারলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহায়তা চাইতে বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
সমাবেশে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যে চারজন নিহত হয়েছেন, তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন। যাঁদের স্বজন হারিয়ে গেল, তাঁদের যে কষ্ট, সেটা অন্যরা বুঝবেন না।
যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাঁদের কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তিনি এলাকাবাসীকে কারও উসকানিতে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এ ঘটনা এক দিনে ঘটেনি। কয়েক দিন আগে থেকে এর প্রস্তুতি চলছিল। লোকজন এখানে যাওয়া-আসা করছিলেন। ফোন করে ডেকে আনা হচ্ছিল। এ ঘটনায় যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের কাছ থেকে পুলিশ এসব তথ্য জানতে পেরেছে। এলাকার অনেকেই সেটা জানতেন, তাঁদের উচিত ছিল পুলিশকে জানানো। যদি পুলিশকে জানানো হতো এবং তাঁরা যদি নাগরিক দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে আজ চারটা প্রাণ ঝরে যেত না।
এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এমন ঘটনার আশঙ্কা থাকলে আপনারা থানার ইনচার্জকে আগে জানাবেন। ঘটনা ঘটার পর জানালে তেমন কিছুই করার থাকে না। এলাকায় যেকোনো ঘটনা ঘটুক না কেন, এমনকি নারী নির্যাতনের ঘটনাও যদি ঘটে, চুরি হওয়ারও যদি আশঙ্কা থাকে, আপনারা পুলিশকে জানাবেন। এখানে পুলিশ তদন্তকেন্দ্র আছে, থানা আছে, তারা যদি কথা না শোনে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পুলিশের দায়িত্ব সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, সরকার পুলিশকে বেতন দেয় দেশের জনগণকে আইনগত সুবিধা দেওয়ার জন্য। নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, মাদক- যেকোনো বিষয়ে তিনি পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান। সমাবেশে উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মায়েরা যাঁরা আছেন, আপনাদের যদি পুরুষেরা নির্যাতন করেন, তাহলে আপনারাও ৯৯৯-এ কল করবেন।’ এলাকার তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শপথ নিন, আপনারা যত দিন জীবিত আছেন, এ এলাকায় এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর না ঘটে।’
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, যাঁরা অপরাধী, তাঁদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় একজন নিরীহ মানুষও হয়রানির শিকার হবেন না বলে তিনি এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন।
সমাবেশ শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। গত সোমবার সকালে উপজেলার ইয়াজপুর গ্রামে একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। নিহত হলেন, রাজশাহী নগরের ভাটাপাড়া এলাকার সোহেল রানা ছোটন (৪৫), গোদাগাড়ী উপজেলার বড়গাছি কানুপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি নাইমুল ইসলাম (৮০), তাঁর ভাই মেহের আলী (৭০) ও গুসিরা গ্রামের চাষি মনিরুল হক (৪৫)।
ঘটনায় রাতে গোদাগাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত সোহেলের ছোট ভাই মো. হৃদয় (৩৩)। মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ৭১ জনকে আসামী করা হয়। পুলিশ এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় এজাহারনামীয় ২১ আসামির মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় ইয়াজপুর ও মোসড়াপাড়া গ্রাম দুটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।