ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনট থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আলামত ধ্বংসের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। গত বছরের অক্টোবর থেকে এই বিষয়ে তদন্ত করছে পিবিআই বগুড়া। গত ৩০ মার্চ পুলিশ মহাপরিদর্শকের দপ্তরে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়।
২০২২ সালের ২ আগস্ট ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেন ধুনট উপজেলার এক স্কুলছাত্রীর মা। তিনি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর কাছে লিখিতভাবে ওই অভিযোগ দেন।
কিন্তু অভিযোগের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় অসন্তুষ্ট হন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা। এক পর্যায়ে ২৮ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে মামলা ও ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ তদন্তভার দেয়ার দাবি জানান তিনি। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের অক্টোবরে মামলার দায়িত্বভার নেন পিবিআই পরিদর্শক সেলিম মালিক। পরবর্তীতে ১ নভেম্বর থেকে মামলার তদন্ত করছেন এসআই সবুজ আলী। আর ওসি কৃপা সিন্ধুর অভিযোগটি দেখছেন পিবিআই পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবির।
লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে অভিযোগকারীর বাড়িতে ভাড়া থাকছিলেন প্রভাষক মুরাদুজ্জামান। এ অবস্থায় বাড়িওয়ালার ১৬ বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কিছু ছবি তোলেন তিনি। পরে গত ৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে মেয়েটিকে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
শুধু তাই নয়, ধর্ষণের কিছু আপত্তিকর দৃশ্যও মুঠোফোনে ধারণ করেন ওই প্রভাষক। পরে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটির সঙ্গে একাধিকবার ঘনিষ্ঠ হন তিনি।
সবশেষ গত বছরের ১২ এপ্রিল সকালে ভাড়া বাসায় মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন মুরাদুজ্জামান। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে স্বজনরা এগিয়ে এলে কৌশলে পালিয়ে যান প্রভাষক। পরে আর তিনি ওই বাসায় ফেরেননি।
তবে ওই ঘটনার পরপরই মুরাদুজ্জামানের পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দেয় মেয়েটির পরিবার। এ ছাড়া গত ১২ মে সকালে ধুনট থানায় মুরাদুজ্জমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। মামলার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেই মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। কিন্তু মামলার আলামত হিসেবে জব্দ মোবাইলের ভিডিও বের করার জন্য সিআইডি পুলিশের কাছে পাঠানোর নামে ডকুমেন্টগুলো নষ্ট করে দেন ওসি।
মামলার বাদী ওই স্কুলছাত্রীর মা বলেন, শুনেছি মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগে ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে পিবিআই। এটা শুনে অনেকখানি ভালো লেগেছে। আর এই মামলা আপোষ করার জন্য ওই সময় অনেক চাপ দেয়া হয়েছিল। পরে পাবনায় বদলী হওয়ার পর আমরা একটু নিশ্চিন্ত হই।
বাদী আরও বলেন, ওই সময় ওসি কৃপা সিন্ধু শুধু আমার মেয়ের ধর্ষণের আলামত নষ্ট করেননি। তার বয়স বাড়িয়ে অ্যাডাল্ট নারী দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া মুরাদুজ্জামানের কাছে শুধু আমার মেয়ের নয়, আরও একাধিক মেয়ের কয়েকশ ছবি ছিল। সেগুলোও নষ্ট হয়েছে।
এসআই সবুজ আলী জানান, চার্জশিট তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি। জানতে পেরেছি অভিযুক্ত মুরাদুজ্জামান হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে আমাদের কাছে কোনো নথি আসেনি।
মুরাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গত ২৪ মে ধুনটের জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটি তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। আদালতের রায়ে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ পরিচালনা কমিটি।
জানতে চাইলে পিবিআই বগুড়ার এসপি কাজী এহসানুল কবির বলেন, ‘মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এ জন্য আমরা এখনই অফিসিয়ালি কিছু জানাচ্ছি না। তবে শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে আমরা আপনাদের জানাব।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবরে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে পাবনা জেলায় পাঠানো হয়। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, জনস্বার্থে ধুনট থানার ওসিকে পাবনা জেলায় বদলি করা হলো।